July 13, 2025, 1:29 pm
শিরোনামঃ
নিরাপত্তার প্রয়োজনেই আমার বৈধ লাইসেন্সকৃত অস্ত্র রয়েছে: আসিফ মাহমুদ এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাটডাউনসহ সব কর্মসূচি স্থগিত খিলক্ষেতের পূজামণ্ডপ: আইনগত উচ্ছেদ প্রধান উপদেষ্টা-সিইসির কী আলাপ হলো, পরিষ্কার করার আহ্বান সালাহউদ্দিনের ৩৬ জুলাই উদযাপন করবে বিএনপি: ৫৮ সদস্যের কমিটি গঠন লন্ডনে বিএনপির বৈঠকের পর কী ভাবছেন অন্যান্য দল মোহাম্মদ আমিনুল হক দীপু শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের কেন্দ্রীয় সহ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মনোনীত পুলিশে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা, যুবদল নেতা গ্রেপ্তার আওয়ামী রাজনীতির মৃত্যু ঢাকায়, দাফন হয়েছে দিল্লীতে : সালাহউদ্দিন ইসরায়েলের বিচার ও গণহত্যা বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি

খিলক্ষেতের পূজামণ্ডপ: আইনগত উচ্ছেদ

Reporter Name
খিলক্ষেতে পূজামণ্ডপ উচ্ছেদ। উপদেষ্টা বলছেন, সকল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রেলের জমি থেকে অস্থায়ী মণ্ডপটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে

খিলক্ষেতের অস্থায়ী পূজামণ্ডপ উচ্ছেদকে শুধু ‘আইনগত ব্যবস্থা’ হিসেবে দেখলে ঢাকা পড়ে যায় রাষ্ট্রের নৈতিকতা, সংখ্যালঘু আস্থা ও প্রশাসনিক পক্ষপাতের প্রশ্ন।ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় রেলের জমিতে নির্মিত একটি অস্থায়ী পূজামণ্ডপ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, ওই জমি ‘জনসাধারণের সম্পত্তি’ এবং অনুমতি না নিয়েই তা দখল করা হয়েছিল। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এক বিবৃতিতে বলেছেন, পূজা উদ্‌যাপনের সময় ‘অস্থায়ী মণ্ডপ’ স্থাপন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল শর্তসাপেক্ষে। পূজা শেষে মণ্ডপ সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল আয়োজকদের। কিন্তু তা মানা হয়নি। বরং আয়োজকেরা স্থায়ী মন্দির স্থাপনের চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

সরকারি এই ব্যাখ্যা অনেকের কাছে যথার্থ মনে হতে পারে। মন্ত্রী-উপদেষ্টা পর্যায়ের এই বক্তব্য হয়তো প্রশাসনের দায়মুক্তির জন্য অপরিহার্য। কিন্তু প্রশ্ন তখনও থেকেই যায়—এই উচ্ছেদ কি একমাত্র সমাধান ছিল? এবং তা কতটা সংবেদনশীলভাবে, রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় এবং সংখ্যালঘু নাগরিকের অধিকার মাথায় রেখে করা হয়েছে?

এই প্রশ্নগুলো শুধু রেলভবনের ভেতর থেকে উঠছে তা নয়, বরং বাংলাদেশের হাজারো সংখ্যালঘু নাগরিক, নাগরিক অধিকারকর্মী, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার সংস্থার ভেতর থেকেও উঠছে।
উচ্ছেদ, তবে কারা বাছাইয়ের শিকার?

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে—’প্রথমে দোকানপাট, রাজনৈতিক দলীয় কার্যালয়, কাঁচাবাজার এবং সবশেষে মন্দিরটি উচ্ছেদ করা হয়।‘প্রশ্ন হলো—এই শত শত দোকানপাট, দলীয় কার্যালয় কি আগে নির্মিত হয়নি? তাদের কত নোটিস দেওয়া হয়েছে, কত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে, কবে ভাঙা হয়েছে, তার স্পষ্ট কোনো তথ্যপত্র কি জনসম্মুখে এসেছে?

আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন—একটি অস্থায়ী মন্দির, যেখানে পূজার সময় সমাজের বহু ধর্মাবলম্বীর অংশগ্রহণ থাকে, সেটি সরিয়ে দিতে কি এমন বুলডোজার আয়োজনের প্রয়োজন হয়? আলোচনার কোনো পরিসর, স্থানান্তরের কোনো বিকল্প, সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতার কোনো মূল্য কি ছিল না?

এই দেশটিকে যদি শুধু আইন, জমি ও মালিকানার ভিত্তিতে পরিচালনা করা হয়, তবে কি সরকারি জমিতে থাকা সব অবৈধ দখল একই রকম উচ্ছেদ সম্ভব?

প্রশাসনিক ‘প্রতিশোধ’ বনাম আইনগত পদক্ষেপ

এ ঘটনাকে সরকার আইনি পদক্ষেপ হিসেবে দেখালেও, সংখ্যালঘুদের অভিজ্ঞতা থেকে বিষয়টি অন্যরকমভাবে প্রতিভাত হয়। কারণ তারা জানেন, রাষ্ট্রীয় উচ্ছেদ যখন মন্দির বা সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় স্থানের ক্ষেত্রে হয়, তখন তাতে প্রশাসনের ‘নির্বিকার নিষ্ঠুরতা’ দেখা যায়—যা অনেক সময় রাজনৈতিক হাওয়া বা প্রতিশোধের আবহেও ঘটে।


হ্যাঁ, রেলের জমিতে অনুমতি ছাড়া স্থাপনা নির্মাণ আইনত বৈধ নয়। কিন্তু সব ‘অবৈধ’ জমি দখলকারীর বিরুদ্ধে আইন সমানভাবে প্রয়োগ হয় কি?রাজনৈতিক ভারসাম্য না ‘নৈতিক পক্ষপাত’?

সরকার বা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নিরুত্তাপ। কিন্তু যখন মানুষের চোখে এক মন্দির উচ্ছেদ হয়ে যায়, তখন তা কেবল রেলের জমির প্রশ্নে সীমাবদ্ধ থাকে না—তা হয়ে ওঠে সংখ্যালঘু নিরাপত্তার প্রশ্ন, প্রশাসনের স্বচ্ছতার প্রশ্ন এবং সবচেয়ে বড় কথা—রাষ্ট্রের নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশ্ন।

রাষ্ট্র যখন হিন্দুদের মন্দির বা খ্রিস্টানদের গির্জা ভেঙে ফেলে অথচ একই সঙ্গে একই জমিতে নির্মিত রাজনৈতিক দপ্তরকে তো আলোচনা করার সময় দেয়ই, সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়, আর তখন সংখ্যালঘু নাগরিকরা এমন বার্তা পায় যে—তাদের অধিকার দ্বিতীয় শ্রেণির।এ ধরনের বার্তা দীর্ঘমেয়াদে একটি রাষ্ট্রে নাগরিক আস্থার ঘাটতি তৈরি করে, করেছে এরই মধ্যে, যা ভবিষ্যতে শুধু রাজনৈতিক সংকট নয়, সামাজিক বৈষম্যের ধ্বংসাত্মক বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে।

আইন থাক, সঙ্গে থাক সংবেদনশীলতা ও স্বচ্ছতা

খিলক্ষেতে পূজামণ্ডপ উচ্ছেদের ঘটনাটি হোক আইনগত, তবুও এর প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক এবং সামাজিক। সংখ্যালঘুদের আস্থার জায়গা যখন বারবার এইভাবে ভেঙে ফেলা হয়—মৌলিক সংবেদনশীলতা ছাড়াই—তখন প্রশ্ন ওঠে: এই দেশটা কি আসলেই সকল নাগরিকের সমান ঠিকানার দেশ?

সরকারি জমি, সে হোক রেলের, সড়কের বা অন্য কোনো খাসজমি, সেই সব জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার আগে একটি সমন্বিত ও স্বচ্ছ তালিকা প্রকাশ করা উচিত—তাতে ধর্ম, রাজনীতি, বাণিজ্য—সব শ্রেণির দখলদারদের উল্লেখ থাকুক।

ধর্মীয় স্থানগুলোতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলে তা স্থানীয় ধর্মীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করা উচিত। যে কোনো ধর্মের মানুষের বিশ্বাস—তা মন্দির হোক বা মসজিদ—হঠাৎ বুলডোজারে ভাঙলে তা শুধু ‘জায়গা ছাড়ানো’ নয়, মনস্তাত্ত্বিক সহিংসতাও।উচ্ছেদকৃত ধর্মীয় স্থানের পূর্ণাঙ্গ আর্কাইভিং ও ফটোগ্রাফিক রেকর্ড রাখা উচিত—এই দেশের ধর্মীয় বৈচিত্র্য যে ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে, তার অন্তত তথ্য-প্রমাণ ইতিহাসে থেকে যাক।

রাষ্ট্রকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সে কি সংখ্যালঘু-সংবেদনশীল নীতি নিয়ে ‘ভবিষ্যতের বাংলাদেশ’ গড়বে, না কেবল মাপজোখের আইন দিয়ে দেশের আত্মাকে পরিমাপ করবে?


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page