বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার রাজনৈতিক মৃত্যু হয়েছে। আওয়ামী রাজনীতির মৃত্যু ঢাকায়, দাফন হয়েছে দিল্লীতে।’
সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে রমনা পার্কের শতায়ু প্রাঙ্গণে (রানী মঞ্চ) জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাস আয়োজিত বাংলা নববর্ষ বরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আসা হাজারো দর্শক-শ্রোতাকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের এই বৈশাখী শোভাযাত্রা, আনন্দ শোভাযাত্রা, পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রা আমাদের এই সংস্কৃতির ঐহিত্যের অংশ, সেটা আমাদের জাগতিক শোভাযাত্রা, আমাদের সংস্কৃতির অংশ। বাংলার বৈশাখী মেলা, বাংলার তালপাতার পাখা ও বাঁশি এটি আমাদের সংস্কৃতি। আমরা বাংলাদেশের মানুষ, সাংবিধানিকভাবে আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নাই। আমরা এদেশের এই ভূখণ্ডের সংস্কৃতিকে, হাজার বছর থেকে লালিত সংস্কৃতিকে লালন করব, পালন করব, এগিয়ে নিয়ে যাব।’
‘যেসব অপসংস্কৃতি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে বিকৃত করার জন্য অনু্প্রবেশ ঘটানো হয়েছিল সেই সংস্কৃতিকে ঝেটিয়ে বিদায় করা আমাদের দায়িত্ব,’ বলেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সারাদেশে আজ একদম আড়ম্বরপূর্ণভাবে উপজেলা পর্যায় থেকে জেলা পর্যায়, মহানগর এবং কেন্দ্র পর্যন্ত আমাদের ঐহিত্যকে ধারণ করে যেভাবে পহেলা বৈশাখ পালন করছি তার মধ্য দিয়ে একটি ম্যাসেজ জাতির কাছে আমরা দিতে চেয়েছি, সেটা হলো- এই বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভৌগোলিক, প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে যেই বাংলা সনের প্রচলন হয়েছিল সেই বাংলা সন, হিজরি সনের সাথে মিল রেখে সম্রাট আকবরের সময়ে মুসলিম ঐতিহ্যে যেটা প্রচলন করা হয়েছিল।’
‘আমি বলতে চাই না এটা একেবারে শুধু মুসলমানদের জন্য অনুসরণীয় কোনো সংস্কৃতি। আমরা যারা বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাস করি, আমরা সবাই বাংলাদেশের ভেতরে এই ভৌগোলিক সীমারেখায় যারা আমরা বাংলাদেশী সকলের আমরা সব ধর্মাবলম্বী, সকল শ্রেণি-গোত্র, পেশা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা এই বাংলাদেশের সিটিজেন হিসেবে এই সংস্কৃতিকেই আমরা সার্বজনীনভাবে পালন করব… অতীতে যা আমরা পালন করতাম। আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না।’
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা, মঙ্গলঘট, মঙ্গল সেইসব সংস্কৃতি একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী, ধর্মীয় গোষ্ঠীর সংস্কৃতি হতে পারে। আমরা তাদের সেই সংস্কৃতি পালনে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা নিশ্চিত করব।’
‘এই ভূখণ্ডের, এই বাংলাদেশের হাজার বছরের লালিত যে সংস্কৃতি, পালিত যে সংস্কৃতি সেই সংস্কৃতি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি। যে স্বতন্ত্র সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের যে সংস্কৃতি তাকে বিকৃত ও বিস্মৃত করতেই মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রচলন করেছিল ১৯৯৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগ।’
তিনি বলেন, ‘যারা মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে অতি পুরাণিক, পৌত্তলিক, জাগতিক বহির্ভূত অতি জাগতিক সংস্কৃতি চর্চা শুরু করতে চেয়েছিলেন সেটা জাতি গ্রহণ করেনি।’
‘আওয়ামী লীগের অপরাজনীতির বিলুপ্ত হয়েছে’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে সকল জনগোষ্ঠীর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতা, শ্রমিক, সংস্কৃতিজীবী সকল জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর কাছে স্মরণীয় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়েছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের অপরাজনীতির বিলুপ্ত হয়েছে।’
পরে জাসাস শিল্পীরা দেশাত্মবোধক, পল্লীগীতিসহ বিভিন্ন গান পরিবেশন করেন।
জাসাস নেতা ইথুন বাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকেন, সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী, জাসাসের সা্বেক সভাপতি রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরীসহ জাসাস নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
