আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভোর থেকেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজারো মানুষ ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। শ্রদ্ধার ফুলে ছেয়ে গেছে শহীদ মিনারের বেদি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, রাজনৈতিক দল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা শহীদদের স্মরণে ফুল অর্পণ করেছেন।
ঢাকার মিরপুর-১-এর বাসিন্দা ওমর সানি ও মুন্নী আক্তার প্রতিবছর তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। এ বছর তাঁদের সঙ্গে ছিল তাঁদের নবজাতক সন্তান মুনজেরিন। ওমর সানি বলেন, “ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের শিশুদের হৃদয়ে গেঁথে দিতে চাই, যাতে তারা বাংলাকে ভালোবাসতে শেখে।”
রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন প্রথমে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর রাত ১২টা ১২ মিনিটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
সকাল সাড়ে ছয়টায় শহীদ মিনারে গিয়ে দেখা যায়, দল বেঁধে মানুষ শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন। তাঁদের হাতে রয়েছে একগুচ্ছ ফুল, ফুলের তোড়া কিংবা শ্রদ্ধাঞ্জলি। সবার পোশাক ও সজ্জায় শোকের প্রতিচ্ছবি। কণ্ঠে বেজে উঠছে বেদনাবিধুর গান—
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি…”
সাড়ে সাতটায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক তামজিদ হায়দার বলেন, “আমরা এমন এক বাংলাদেশ চাই, যেখানে সকল জাতিসত্তার মানুষ তাঁদের নিজস্ব ভাষায় কথা বলতে পারবেন এবং মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন।”
শুধু দল ও সংগঠনই নয়, ব্যক্তি উদ্যোগেও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসছেন অনেকে। সরকারি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন তাঁর ১১ বছর বয়সী মেয়ে রাইদাকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারে আসেন। তিনি বলেন, “বাংলা ভাষা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। আমাদের সন্তানেরা যাতে এ ভাষার ঐতিহ্য বুঝতে পারে, সেজন্যই ওকে সঙ্গে এনেছি।”
সকাল পৌনে আটটায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, “গণতন্ত্র একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাব।”
ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জনস্রোত অব্যাহত রয়েছে, আর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ একুশের চেতনায় মুখর হয়ে উঠেছে।