খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে, যাতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা রাতে প্রেস ব্রিফিং করে কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তি এবং উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবি জানান। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কুয়েটে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে বলে তাঁরা ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বুধবার বেলা একটার মধ্যে দাবি পূরণের আলটিমেটাম দিয়েছেন।
সংঘর্ষের জেরে খুলনা নগরের শিববাড়ী মোড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা জিয়া হল চত্বরে অবস্থান নেন এবং মিছিল করেন, অপরদিকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা শিববাড়ী মোড়ে অবস্থান নেন। দুই পক্ষের মধ্যে দূরত্ব ছিল মাত্র কয়েক হাত, ফলে সেখানে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কুয়েটে দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সংঘর্ষের পর ঢাকায়ও পৃথক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও ছাত্রদল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুয়েট শাখার সদস্যসচিব জাহিদুর রহমান জানান, তাঁদের অন্তত ৫০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন এবং মোট আহতের সংখ্যা দেড় শতাধিক হতে পারে।
খানজাহান আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন জানিয়েছেন, সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
কুয়েট ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত ১১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ছাত্রদলের কমিটি গঠন নিয়ে কয়েক দিন ধরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন মেসেঞ্জার গ্রুপে প্রতিক্রিয়া চলছিল। সোমবার ছাত্রদল ক্যাম্পাস এলাকায় লিফলেট বিতরণ করলে মঙ্গলবার সকালে শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে মিছিল বের করেন। পরে উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও করার সময় ছাত্রদল নেতা–কর্মীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেন। তাঁরা ‘ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ চাই’—এমন নানা স্লোগান দেন। কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে পৌঁছালে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা তাঁদের বিরুদ্ধে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন, যা উত্তেজনার সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয় এবং তা ক্যাম্পাসের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। রেলগেট, তেলিগাতিসহ আশপাশের এলাকার বিএনপির নেতা-কর্মীরা ছাত্রদলের সঙ্গে যোগ দিলে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতা জানান, সোমবার ছাত্রদলের সদস্যরা ক্যাম্পাসের বাইরে ফরম বিতরণ করেন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। তাঁদের অভিযোগ, ছাত্রদল বহিরাগতদের নিয়ে এসে শিক্ষার্থীদের আক্রমণ করে, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়।
পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত রয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবিতে অনড় অবস্থানে আছেন।