March 16, 2025, 9:49 am

৬৪ শতাংশ মানুষ চান না যে প্রধানমন্ত্রী দুবারের বেশি মেয়াদে থাকুন

মেহেদী হাসান

সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত জাতীয় জনমত জরিপ-২০২৪-এ বিভিন্ন মতামত উঠে এসেছে। জরিপটি পরিচালনা করে সংবিধান সংস্কার কমিশন, যা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। সম্প্রতি কমিশনের প্রতিবেদনের সঙ্গে এ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয় ৫ থেকে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে। দেশের ৬৪ জেলার ৪৫,৯২৫টি খানার (পরিবার) ১৮ থেকে ৭৫ বছর বয়সী মানুষের কাছ থেকে সরাসরি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে এ তথ্য নেওয়া হয়।

জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ। এ বিষয়ে ৬ শতাংশেরও বেশি মানুষ জানেন না বলে জানিয়েছেন, এবং প্রায় ২ শতাংশ উত্তর দিতে রাজি হননি। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রাষ্ট্রপতির হাতে আরও ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে, ৪৫ শতাংশ মানুষ মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর হাতেই ক্ষমতা থাকা উচিত।

জাতীয় সংসদের মেয়াদ চার বছর করার প্রস্তাবে সাধারণ মানুষ সাড়া দেননি। ৭৮ শতাংশ মানুষ পাঁচ বছর মেয়াদের পক্ষে মত দিয়েছেন, আর ১৬ শতাংশের কিছু বেশি চার বছরের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। সংসদ গঠনের ক্ষেত্রে ৭৮ শতাংশ মানুষ প্রচলিত পদ্ধতি অর্থাৎ সর্বাধিক ভোট পাওয়া প্রার্থীকে বিজয়ী করার পক্ষে মত দিয়েছেন। অনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে সংসদ গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে ৯ শতাংশেরও কম মানুষ।

সংসদকে উচ্চ ও নিম্নকক্ষে বিভক্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৩৫ শতাংশ মানুষ, বিপক্ষে ৩৯ শতাংশ এবং ২৩ শতাংশের বেশি এ বিষয়ে কোনো মতামত দেননি। সংসদ সদস্যরা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন কি না, এ বিষয়ে ৮৩ শতাংশ মানুষ বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গণভোটের পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ৮২ শতাংশ উত্তরদাতা। নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের পক্ষে মত দিয়েছেন ৭৫ শতাংশ মানুষ। বর্তমানে ৫০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে, তবে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নয়।

ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষার বিষয়ে সংবিধানে সুস্পষ্ট বিধান থাকা উচিত বলে মত দিয়েছেন ৯১ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ। মতপ্রকাশ ও বাক-স্বাধীনতার বিষয়ে ৫৩ শতাংশ মানুষ কোনো বিধিনিষেধ না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন, বিপরীতে ৪৩ শতাংশ সংবিধানে বিধিনিষেধ রাখার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা সীমিত করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৬১ শতাংশের বেশি মানুষ, আর ২৯ শতাংশ এ ক্ষমতা সংবিধানে না রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৯১ সালে গণতন্ত্রে ফেরার পর বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে। এরপর ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়, যা বিতর্কিত ও একতরফা হিসেবে সমালোচিত হয়েছে।

২০২৪ সালের জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে এবং ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্ট পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের দুটি ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে বাতিল করে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পুনর্বহাল ঘোষণা করে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page