ঢাকা, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫: পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাংলাদেশকে নদী পুনরুদ্ধারের একটি সফল উদাহরণ হিসেবে গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, একটি মাত্র নদী নয়, বরং নদীর সংযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা জরুরি। এ জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা প্রয়োজন।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার পানি ভবনে আয়োজিত “নদী পুনরুদ্ধার: বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা” শীর্ষক জ্ঞান বিনিময় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দূষিত নদীগুলোকেও সুপেয় পানির উৎসে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে।
বুড়িগঙ্গা নদীর প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ট্যানারির ক্রোমিয়াম দূষণ এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। নীতি ও পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এডিবির সহায়তায় একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের সক্ষমতা কাজে লাগানোর ওপর জোর দেন উপদেষ্টা।
তিনি আরও বলেন, ১৯৯৯ সালের পানি নীতি এবং চলমান ডেল্টা পরিকল্পনার সংশোধন ভবিষ্যতের নদী পুনরুদ্ধারের কাঠামো হিসেবে কাজ করবে। ইতোমধ্যে পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো) উপত্যকার নদীগুলো পুনরুদ্ধারের একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরকে দূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, সরকার শিল্প-কারখানার জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। নদী দখলদারদের তালিকাও সরকারের কাছে রয়েছে। প্লাস্টিক দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রচলিত ড্রেজার দিয়ে নদীর তলদেশ থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সরানো সম্ভব নয়। এ জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতির প্রয়োজন। তাই পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি কর্মপরিষদ গঠনের আহ্বান জানান তিনি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, বর্ষাকালে নদীর স্বাভাবিক প্লাবন দূষণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যথাযথ সম্পদ ও উদ্যোগ নিয়ে ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে সুরমার মতো নদীগুলো পুনরুদ্ধার সম্ভব বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি নদী-নির্ভর জনগোষ্ঠীকে পুনরুদ্ধার পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর দীর্ঘমেয়াদি সহায়তার আহ্বান জানান। প্রকল্পভিত্তিক নয়, বরং প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানাধীন ধারাবাহিক নদী পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন উপদেষ্টা। এডিবির সহায়তায় অন্তত একটি নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে একটি টাস্কফোর্স গঠনের ঘোষণা দেন তিনি।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকার উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনিযুক্ত প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, এডিবির আবাসিক প্রতিনিধি হো ইউন জিয়ং এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান।
এছাড়া পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান, এডিবির পানি সম্পদ বিশেষজ্ঞ ইয়াওঝো ঝোউ, ইয়াসমিন সিদ্দিকী, আও শিওন ইয়ি, জুয়েলিয়াং কাই, স্টেফান রাউ, এরিক কিনসিউ, অরুণ শুমশেরে রানা ও কেনিচি ইয়োকোয়ামা অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।