March 16, 2025, 10:01 am

জাতিসংঘের প্রতিবেদন: পুলিশ, বিচারব্যবস্থাসহ ৫ খাতে সংস্কারের সুপারিশ

মেহেদী হাসান

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসন্ধান দল ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচটি খাতে জরুরি সংস্কারের সুপারিশ করেছে। প্রতিবেদনটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়ার পর প্রকাশিত হয়। জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল দাবি করেছে, এসব লঙ্ঘন আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে ঘটেছে। ভবিষ্যতে এসব ঘটনা বন্ধ করতে পাঁচটি খাতে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।

এই খাতগুলো হলো: ১) জবাবদিহি ও বিচারব্যবস্থা, ২) পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী, ৩) নাগরিক পরিসর, ৪) রাজনৈতিক ব্যবস্থা, এবং ৫) অর্থনৈতিক সুশাসন। জাতিসংঘ বলছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে এবং একটি উন্নত বাংলাদেশ গঠনে এই খাতগুলোতে সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।

বিচারব্যবস্থায় জাতিসংঘ সুপারিশ করেছে যে, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতনসহ যেসব অপরাধ ঘটেছে, সেগুলোর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এসব অপরাধের জন্য যারা দায়ী, তাদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী বিচার করতে হবে এবং ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এছাড়া, মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণাদি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে কোনো অপরাধের প্রমাণ ধ্বংস বা লুকানো না হয়। প্রতিবেদনটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার সুপারিশ করেছে, যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত।

পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিষয়ে, জাতিসংঘ পুলিশের প্রবিধান সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে। এর মাধ্যমে মানবাধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক বিধি মেনে পুলিশ বলপ্রয়োগ এবং মারণাস্ত্রের ব্যবহার সীমিত করতে হবে। পুলিশকে মৃত বা গুরুতর আহতের ঝুঁকি ছাড়া মারণাস্ত্র ব্যবহারের অধিকার দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের সুপারিশও করেছে জাতিসংঘ। এই কমিশনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তি দিতে হবে।

নাগরিক পরিসরে, জাতিসংঘ সুপারিশ করেছে যে, বিতর্কিত ফৌজদারি আইনগুলো সংশোধন করতে হবে এবং সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ অন্যান্য আইন ব্যবহার করে গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ বা রাজনৈতিক বিরোধীদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা বন্ধ করতে হবে। নিরাপত্তা বাহিনীকে বেআইনি নজরদারি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং এমন নজরদারি তদন্ত করে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।

রাজনৈতিক ব্যবস্থায়, জাতিসংঘের মতে, মুক্ত ও প্রকৃত নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা উচিত। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত থাকবে।

অর্থনৈতিক সুশাসনে, জাতিসংঘ দুর্নীতি দমন আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে। ব্যাংক ঋণ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের বিচার করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

এই সব সংস্কারের মাধ্যমে জাতিসংঘ বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা কমানো সম্ভব এবং একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা যাবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page