February 11, 2025, 4:43 am
শিরোনামঃ
সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান গ্রেফতার জামালপুর সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা ও কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত মিরপুরে বিএনপির শীতবস্ত্র বিতরণ মডেল তিন্নি হত্যা মামলায় সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভি খালাস নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠনের নেত্রী নিশি সাতক্ষীরায় গ্রেপ্তার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় জুলাই ও ৩৬ চত্বর দর্শনার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক, অসম চুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন ও তার ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ঘুসসহ গ্রেফতার পাসপোর্ট কর্মকর্তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর গ্রেফতার

চট্রগ্রাম পূজা মণ্ডপে ‘ইসলামী সংগীত’: নানামুখী সমালোচনা, মামলা ও দুই গ্রেফতার

Reporter Name

বাংলাদেশের নানা স্থানে মণ্ডপে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় উদ্বেগ ও আশঙ্কার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বাংলাদেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা৷ কিন্তু পূজার দ্বিতীয় দিন চট্রগ্রামের পূজা মণ্ডপে ‘ইসলামী সংগীত’ পরিবেশনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে- তা নিয়ে চারদিকে সমালোচনার ঝড় উঠে।

নানামুখী সমালোচনা পর ইসলামী সংগীত পরিবেশকারী ছয়জনকে এবং পূজা উদযাপন কমিটির এক নেতাকে আসামি করা মামলা করা হয়। তাদের মধ্যে সংগীত পরিবেশনকারী দুই জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বৃহম্পতিবার স্থানীয় সময় রাতে পূজা মণ্ডপে গান পরিবেশনের ছড়িয়ে পড়া খণ্ড-খণ্ড ভিডিওতে দেখা যায়, ছয় জন যুবক “শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান, হিন্দু বলো বৌদ্ধ বলো কিংবা খ্রিস্টান, সবাই হেথা শান্তি পাবে পাবে রে সম্মান…ইসলাম দিল সেই সম্মান।” এবং “আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম” দুইটি গান পরিবেশন করে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা মণ্ডপে এই ধরণের ‘ইসলামী সংগীত’ পরিবেশনা তুমুল সমালোচনার জন্ম দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নিয়ে অনেকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

সংগীত পরিবেশনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর জানা যায়, এই ছয় জন যুবক ‘চট্টগ্রাম কালচারাল অ্যাকাডেমি’ নামের একটি সংগঠনের সদস্য। আর এই সংগঠনের সঙ্গে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের বিরোধীতাকারী জামায়াতের সম্পর্ক রয়েছে বলে অভিযোগ উঠে।

প্রত্যক্ষদর্শী দুই সাংবাদিক জানান, বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টার কিছু পরে চট্রগ্রামের নগরের আন্দরকিল্লার জেএমসেন হলের পূজা মণ্ডপ মঞ্চে ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির’ ছয় সদস্য উঠে কোনো রকম বাদ্যযন্ত্র ছাড়া ইসলামী দাওয়াতী গান ‘‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম…” পরিবেশন করেন। তখন সেখানে উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কিছুটা অপ্রস্তুত ও হতভম্ব পড়েন। চারদিকে সমালোচনা সৃষ্টি হয়।

তারা আরও বলেন, এই ঘটনার জেরে জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপের বাইরে বিক্ষোভ করেন শতাধিক হিন্দু ধর্মাবলম্বী। অনেক রাত পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলে। পরে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‍্যাবের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

রাতেই চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম জেএমসেন হলের পূজামণ্ডপে উপস্থিত হয়ে ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। একইসঙ্গে ঘটনায় দোষীদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।

স্থানীয় সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “পূজার অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের স্থানীয় রাজনীতিবিদদের থাকার কথা ছিল। তাই সংবাদ সংগ্রহে সেখানে গিয়েছিলাম। তখন দেখি মঞ্চে ছয় জন যুবক দুইটি গান পরিবেশন করেন। প্রথমে তারা শাহ আব্দুল করিম ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানটি পরিবেশন করেন। কিন্তু যখন তারা ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম..’ সংগীত পরিবেশন করে তখন সবাই কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের আলোচনা-সমালোচনা শুরু করেন।’’

পূজা মণ্ডপে ইসলামী সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় সাত জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছে চট্রগ্রাম পূজা উদযাপন কমিটির অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন। সেখানে আসামি করা হয়েছে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সংগীত পরিবেশনকারী ছয় জনকে এবং তাদেরকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণকারী পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তকে।

মামলা হওয়ার পর সংগীত পরিবেশনকারী শহিদুল করিম ও মো. নুরুল ইসলাম নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে চট্রগ্রাম পুলিশ। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানায় পুলিশ।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কাজী তারেক আজিজ ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান, “পূজামণ্ডপে সংগীত পরিবেশনের সঙ্গে যুক্ত ছয় জন এবং অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণকারী সজল দত্তসহ সাত জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। তারমধ্যে সংগীত পরিবেশনকারী শহিদুল করিম ও মো. নুরুল ইসলাম নামের দুইজন মাদ্রাসার শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

মণ্ডপে ইসলামী সংগীত পরিবেশন, জানতো না পূজা কমিটি

পূজা মণ্ডপে যে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করা হবে, তা আগে থেকে জানতেন না বলে দাবি করেছেন চট্রগ্রাম পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা। তারা বলছেন, অনুষ্ঠান সূচিতেও বিষয়টি ছিল না। পূজা কমিটির নেতা সজল দত্তের ‘ব্যক্তিগত ইচ্ছায়’ চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির লোকেরা মণ্ডপে গান পরিবেশন করেছে।

চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য বলেন, “সজল দত্ত (তার) একান্ত ব্যক্তিগত ইচ্ছায় তাদেরকে অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়েছে। যা আমরা জানতাম না। তাছাড়া আমাদের পূজায় ভারতীয় হাইকমিশনের সেক্রেটারি আমন্ত্রিত অতিথি থাকায় সেটা নিয়ে আমরা ব্যস্ত ছিলাম। যার কারণে মণ্ডপে উপস্থিত ছিলাম না। পরে ঘটনা জানার পরে দৌড়ে এসে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করি। ”

“কেন তাদেরকে পূজা অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে সজল দত্তের কাছে জানতে চাওয়া হলে- তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। ঘটনার পর থেকে তিনি নিজের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ করে রেখেছেন” বলে যোগ করেন আশীষ ভট্টাচার্য।

চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম ভয়েস অফ আমেরিকার কাছে দাবি করেন, “পূজা উদযাপন কমিটির নেতা সজল দত্তের আমন্ত্রণে তারা সেখানে গিয়েছেন। দুইটি সম্প্রীতির সংগীত পরিবেশন করেছেন। কোনো ইসলামী সংগীত ছিল না। গান পরিবেশ শেষে তাদেরকে ধন্যবাদও জানান উপস্থিত লোকেরা।”

তবে, এ বিষয়ে চট্রগ্রাম পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারটিতে যোগাযোগ করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। তাই এই প্রতিবেদনের জন্য তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

চট্রগ্রাম পূজা কমিটির সভাপতি-সম্পাদককে অব্যাহতি, সজলকে বহিষ্কার

চট্টগ্রামে পূজামণ্ডপে এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। একইসঙ্গে ঘটনায় যুক্তদের চিহ্নিত করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি জানান এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা।

‘দায়িত্বে অবহেলার’ জন্য চট্রগ্রাম পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বলকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে কালচারাল একাডেমিকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য চট্রগ্রাম পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তকে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এই বিষয়ে সভাপতি বাসুদেব ধর ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “ঘটনার সঙ্গে যুক্ত সজল দত্তকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থতার জন্য চট্রগ্রাম কমিটির সভাপতি-সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”

তিনি বলেন, “এই অবাঞ্ছিত ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ অত্যন্ত বেদনাহত হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এই ধরনের ঘটনা সুন্দর প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিতে পারে। সরকার, সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সমাজকে এক হয়ে কাজ করতে হবে এবং দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।”

সভাপতি আশীষ ভট্টাচার্য বলেন, “আমি অব্যাহতির দেওয়ার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। কেন ও কী উদ্দেশ্যে এটি করা হয়েছে তা তদন্তের মাধ্যমে ‍পুলিশ জাতির সামনে পরিষ্কার করবে আশা করি।”

এগুলো ‘সম্প্রীতির সংগীত’, সংগঠনের সম্পৃক্তার প্রশ্ন এড়িয়ে গেল জামায়াত

চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির আ জ ম ওবায়দুল্লাহ বলেন, “আমি যতটুকু জানি পূজা পরিষদের নেতা সজল দত্তের আমন্ত্রনে তারা সেখানে গিয়েছেন। এবং দুইটি অসাম্প্রদায়িক গান পরিবেশ করেছেন। গান পরিবেশনের জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। এখন সেটি নিয়ে কেন এতো মাতামাতি তা, আমি বুঝতে পারছি না।”

কালচারাল একাডেমির জামায়াতের সাথে সংশ্লিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠন কিনা জানতে চাইলে ওবায়দুল্লাহ সারাসরি তার কোনো উত্তর দেননি। তারা সেখানে কোনো রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে যায়নি বলে দাবি তার।

এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল্লাহ বলেন, “আপনি আমাকে জামায়াতের নেতা হিসেবে চিনেন। কিন্তু আমি যখন চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অনুষ্ঠানে যাই, যেখানে তো জামায়াত নেতা হিসেবে গণ্য হবো না। সেখানে সব দলের আমাদের বন্ধু-বান্ধব আছে।”

“সেই রকম চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমিকে যদি জামায়াতের সাংস্কৃতিক সংগঠন ধরাও হয়, তারা সেখানে কিন্তু রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে নয়, বন্ধুর আমন্ত্রণে গিয়েছে। এটার সঙ্গে জামায়াতের রাজনীতিকে টানা ঠিক হবে না।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page