রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, পুতিন প্রায় ৮৭ শতাংশ ভোটে জয়ী হয়েছেন, যা রাশিয়ার সোভিয়েত-পরবর্তী ইতিহাসে সর্বোচ্চ ফলাফল। কিন্তু তার এ নির্বাচনের গণতান্ত্রিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠেছে। খবর আল জাজিরার।
সোমবার (১৮ মার্চ) সকালে তার প্রচারণা সদরদপ্তরে নির্বাচন-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন বলেন, তার এ নিরঙ্কুশ জয়ই প্রমাণ করে পশ্চিমা শক্তিকে গায়ে না মাখা এবং ইউক্রেনে হামলা করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।
আগের দিন রোববার (১৭ মার্চ) ভোট শেষ হওয়ার পর থেকেই এ আভাস মিলছিল যে, পুতিন আরও ছয় বছরের জন্য তার ক্ষমতাকে নিশ্চিত করতে যাচ্ছেন।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের মতে, প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা গণনা করে দেখা গেছে প্রায় ৮৭ শতাংশ ভোট গেছে পুতিনের পক্ষে। তার মানে তখনই এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, ৭১ বছর বয়সী পুতিন জোসেফ স্টালিনকে ছাড়িয়ে যাবেন এবং ২০০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদি নেতা হবেন।
প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী নির্বাচনে পুতিনের অপর তিন প্রতিদ্বন্দ্বি কমিউনিস্ট প্রার্থী নিকোলাই খারিটোনভ মাত্র ৪ শতাংশের নিচে ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছেন, নবাগত ভ্লাদিস্লাভ দাভানকভ তৃতীয় এবং অতি জাতীয়তাবাদী লিওনিড স্লুটস্কি চতুর্থ স্থান পেয়েছেন। কিন্তু তারা কোন চ্যালেঞ্জই তৈরি করতে পারেননি এ নির্বাচনে।
পুতিন কেজিবির একজন প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট কর্নেল, যিনি ১৯৯৯ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিলেন, নির্বাচনের এ ফলাফল পশ্চিমাদের কাছে এ বার্তা তুলে ধরে যে, পরাক্রমশালী রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা নেতাদের মোকাবেলা করতে হবে। তা যুদ্ধের ক্ষেত্রে হোক, বা শান্তির ক্ষেত্রে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার এ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে মন্তব্য করেছে।
হোয়াইট হাউসে নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, এই নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। কারণ নির্বাচনে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের কারাবন্দি করে এবং তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে কাউকে অংশ গ্রহণ করতে না দিলে তা কীভাবে গণতান্ত্রিক হতে পারে?
এক এক্স বার্তায় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যেমন হয় এ নির্বাচন তেমনভাবে হয়নি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, এ জালিয়াতির নির্বাচন কোনোভাবেই বৈধ হতে পারে না এবং হবে না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত, ২০২২ সালে ইউক্রেনে পুতিনের আক্রমণের দুই বছরেরও বেশি সময় পরে এ নির্বাচনটি হলো।
গত ১৫ মার্চ থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিন দিন ধরে চলা ভোট গ্রহণের তৃতীয় ও শেষ দিনে রাশিয়ার হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে পুতিনের বিরুদ্ধে।