ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডের বৃহত্তম আল-শিফা হাসপাতাল চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। দখলদার দেশটির সেনারা সেখানে গুলিও চালিয়েছে। খবর আল জাজিরার।
ইসরায়েলি বাহিনীর এমন অবস্থানের কারণে হাসপাতালে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার কারণে আল-শিফা হাসপাতাল থেকে ফিলিস্তিনিরা চলে যাচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনী ইতোমধ্যে উত্তর গাজার মেডিকেল কমপ্লেক্সের ভেতরে গুলি চালিয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন বলে খবরে বলা হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার রাফায় স্থল হামলা চালানোর সিদ্ধান্তের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার মুখে গাজার অন্যান্য এলাকা থেকে প্রায় ১০ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি মিশরের সীমান্তবর্তী রাফা শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। নিরাপত্তার জন্য এই স্থানে তারা আশ্রয় নিলেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সেখানেও সেনা অভিযানের অনুমোদন দিয়েছেন। রাফায় ইসরায়েলের এই অভিযানের বিরুদ্ধে সতর্কতা জানিয়েছে জাতিসংঘ, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস। যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ সোলজ মধ্যপ্রাচ্যে দুই দিনের সফরের আগে ইসরাইলকে গাজায় বৃহত্তর আকারে মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি দক্ষিণ গাজার রাফা শহরে ইসরায়েলের অভিযানের পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ওলাফ সোলজ বলেন, রাফাতে ব্যাপক আক্রমণের ফলে অনেক বেসামরিক হতাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যা অবশ্যই কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা উচিত।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। হামলায় ১২শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়। জিম্মি করে নিয়ে যায় আরও ২৪২ জনকে। ওই দিন থেকে পাল্টা আক্রমণে তীব্র আক্রোশে গাজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলি হামলায় পুরো গাজা ভূখণ্ড প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন সাড়ে ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। আর আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে সাড়ে ৭৩ হাজার। ঘরবাড়ি হারিয়ে গাজার বাসিন্দারা প্রায় সবাই উদ্বাস্তু হয়ে গেছে।
কঠোর অবরোধ ও অবিরাম হামলার মধ্যে থাকা গাজাবাসীরা অনাহারে ভুগতে ভুগতে দুর্ভিক্ষের প্রান্তে চলে গেছে। ইতোমধ্যেই অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় শিশুসহ অনেকের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষুধায় বেপরোয়া হয়ে ওঠা লোকজন ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে।
এমন অবস্থায় সম্প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে প্রস্তাব দেয় হামাস। এতে ইসরায়েল অসম্মতি জানানোয় স্থবির হয়ে পড়েছিল আলোচনা। তবে আবারও মধ্যস্থাতাকারীদের উদ্যোগে কাতারে নতুন করে আলোচনা শুরু হবে বলে জানা গেছে।
মোসাদের গোয়েন্দা প্রধানের নেতৃত্বে ইসরায়েলের একটি প্রতিনিধিদল কাতারের দোহায় যুদ্ধবিরতির জন্য হামাসের একটি পরিকল্পনার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।