হাইতির প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেছেন। গুয়েনার প্রেসিডেন্ট এবং ক্যারিবিয়ান কমিউনিটির (কেরিকম) বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইরফান আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কেরিকমের নেতারা হাইতির পরিস্থিতি নিয়ে একটি জরুরি শীর্ষ সম্মেলন করার সময় এরিয়েল হেনরির পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইরফান আলী।
হাইতিতে বর্তমানে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেখানে বিভিন্ন অপরাধী গোষ্ঠীর মধ্যে সহিংসতা বাড়তে থাকায় দেশজুড়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
দেশজুড়ে সহিংসতা এবং অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই পদত্যাগের চাপে ছিলেন হাইতির প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি। হাইতির বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার জ্যামাইকাই বৈঠকে বসেন আঞ্চলিক নেতারা।
বর্তমানে পুয়ের্তো রিকোতে অবস্থান করছেন হেনরি। তবে বর্তমান সহিংস পরিস্থিতির কারণে তিনি দেশেও ফিরতে পারছেন না। ২০২১ সালের জুলাই মাসে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নিহত হওয়ার পর থেকেই দেশের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন হেনরি।
সে সময় নিজ বাসভবনে হত্যার শিকার হন প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মইসি। আততায়ীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ঢুকে তাকে গুলি করে হত্যা করে। সশস্ত্র একটি দল প্রেসিডেন্ট জোভেনেলের বাড়িতে মাঝ রাতে হামলা চালায়। পরে তাকে গুলি করে হত্যা করে। হামলায় প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মইসির স্ত্রীও আহত হন।
জ্যামাইকার রাজধানী কিংস্টনে বৈঠকের পর বক্তৃতাকালে ক্যারিবিয়ান কমিউনিটির চেয়ারম্যান এবং গায়ানার প্রেসিডেন্ট ইরফান আলী বলে, আমরা তার (এরিয়েল হেনরি) পদত্যাগের বিষয়টি জানতে পেরেছি। একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা এবং অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রীর নামকরণের বিষয়ে আলোচনার কথাও জানান তিনি।
হেনরি এরিয়েলের পদত্যাগের দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ে হাইতির রাজধানী পোর্ট-অব-প্রিন্সের রাস্তাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে ভারী অস্ত্রধারী বিভিন্ন গ্যাং।
হাইতি পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের স্বাধীন দ্বীপরাষ্ট্র। এর সরকারি নাম হাইতি প্রজাতন্ত্র। ক্যারিবীয় সাগরের হিস্পানিওলা দ্বীপের পশ্চিম এক-তৃতীয়াংশ এলাকা নিয়ে রাষ্ট্রটি গঠিত। দ্বীপের বাকি অংশে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র অবস্থিত।
১৮০৪ সালে হাইতি লাতিন আমেরিকার প্রথম স্বাধীন দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়। এটিই দাসদের সফল বিপ্লবের ফলে সৃষ্ট একমাত্র রাষ্ট্র। হাইতি প্রথমে স্পেনীয় ও পরে ফরাসি উপনিবেশ ছিল। হাইতির সংখ্যাগরিষ্ঠ আফ্রিকান দাসেরা ফরাসি ঔপনিবেশিকদের উৎখাত করলে হাইতি স্বাধীনতা লাভ করে।
এ পাহাড়ি দেশটি একসময় অরণ্যে আবৃত ছিল। বেশির ভাগ গাছই কেটে ফেলা হয়েছে, ফলে মৃত্তিকার ক্ষয় ঘটেছে। পল্লী অঞ্চলে কৃষকরা পাহাড়ের পাদদেশে ক্ষুদ্রাকার জমিতে চাষবাস করে। অপুষ্টি ও বেকারত্ব হাইতির বড় সমস্যা।
ইতিহাসজুড়ে হাইতির জনগণ দুই ভাগে বিভক্ত। একদিকে ক্ষুদ্র একটি শিক্ষিত অভিজাত শ্রেণি, যারা বেশিরভাগ সম্পদ ও রাজনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী। অন্যদিকে বিশাল নিম্নবিত্ত শ্রেণি, যাদের কোনো ক্ষমতা নেই। বর্তমানে হাইতি পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ। অনেক হাইতীয় দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।
হাইতির রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার ইতিহাস দীর্ঘ। দেশটিতে অনেকগুলো স্বৈরশাসক শাসন করেছেন। এদের মধ্যে ফ্রঁসোয়া দুভালিয়ে-র নাম উল্লেখযোগ্য। ২১০০ শতকের প্রারম্ভে এসে হাইতি একটি গ্রহণযোগ্য সরকার প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা করছে।