বাংলাদেশে চলমান অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ব্যাংক ঋণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে ২০,৮৮৩ কোটি টাকায়, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ঋণাত্মক ৭৪১.৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ, এক বছরে ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৯১৬.৭৩ শতাংশ।
রাজস্ব ঘাটতির প্রভাব: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রায় ৫৮,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি দেখা গেছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২,১৪,০০০ কোটি টাকা, তবে আদায় হয়েছে ১,৫৬,০০০ কোটি টাকা। ফলে সরকারের ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঋণের উত্স ও ধরণ: সরকার প্রধানত ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করে থাকে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১,৩৭,৫০০ কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে ৯৯,০০০ কোটি টাকায় নামানো হয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার ৭৪,৪২০ কোটি টাকা বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে ৫৮,৬৬১ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।
বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিতে স্থবিরতা: ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি নেমে আসে ৭.২৮ শতাংশে, যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, উচ্চ সুদহার ও বিনিয়োগে অনাগ্রহ এর পেছনের কারণ। ব্যাংকগুলোর কাছে উদ্বৃত্ত অর্থ থাকায় তারা সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতামত: বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, রাজস্ব আদায়ের ঘাটতি মেটাতে সরকার ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু এটি মূল্যস্ফীতি বাড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করছে। তার মতে, কর ফাঁকি রোধ করে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোই হলো টেকসই সমাধান।
সমাধান ও সুপারিশ: ১. রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি: কর ফাঁকি রোধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ। ২. বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা: রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব নীতি গ্রহণ। ৩. ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা হ্রাস: ব্যাংক ঋণ গ্রহণের পরিবর্তে বিকল্প অর্থায়ন উৎস অনুসন্ধান।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হলে রাজস্ব আদায়ে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে।