March 16, 2025, 10:59 am

দারিদ্র্যের বাধা পেরিয়ে যাঁরা হয়েছেন শতকোটিপতি

মেহেদী হাসান

কুঁড়েঘর থেকে প্রাসাদ—এমন গল্প নতুন নয়। পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ শূন্য থেকে শুরু করে একসময় শতকোটিপতি বা বিলিয়নিয়ার হয়েছেন। তাদের জীবনের সংগ্রাম, অধ্যবসায় ও সাফল্যের গল্প প্রেরণার বাতিঘর হয়ে আছে আমাদের সামনে।

অপরাহ উইনফ্রে: দারিদ্র্য থেকে মিডিয়া সাম্রাজ্য

যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় টক শো উপস্থাপক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অপরাহ উইনফ্রের শৈশব কেটেছে দারিদ্র্য ও অনিশ্চয়তার মধ্যে। বাবার সঙ্গে ছিলেন না মা, আর মায়ের সঙ্গে থেকেও পাননি স্বচ্ছলতার ছোঁয়া। ক্রিসমাসে উপহার পাওয়ার সৌভাগ্যও হয়নি তাঁর। ১২ বছর বয়সে জানতে পারেন, সান্তা ক্লজের অস্তিত্ব নেই, আর সেবারই মা জানান, উৎসবের সামর্থ্য তাদের নেই। পরে একদল সন্ন্যাসিনী বাড়িতে কিছু খাবার ও একটি পুতুল দিয়ে যায়, যা অপরাহর জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় উপহার হয়ে থাকে।

আজ ৩০০ কোটি ডলারের মালিক অপরাহ প্রতিবছর লাখ লাখ খেলনা দান করেন সেই সেবামূলক প্রেরণায়।

রিহানা: সুরের জগতে সাফল্য

বার্বাডোজে জন্ম নেওয়া পপ তারকা রিহানার জীবনও শুরু হয়েছিল কঠিন বাস্তবতায়। বাবা ছিলেন জামাকাপড় বিক্রেতা, তবে মাদক ও অ্যালকোহলে আসক্ত। মাইগ্রেনের যন্ত্রণায় শিশুকালে ভুগেছেন, সন্দেহ হয়েছিল টিউমার আছে। কিন্তু গায়িকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। আটটি প্লাটিনাম অ্যালবাম আর ১৫০ কোটি ডলারের সম্পদ নিয়ে এখন তিনি বিশ্বসংগীতের অন্যতম তারকা।

হাওয়ার্ড শুলজ: ডায়াপার বিক্রেতার ছেলে থেকে স্টারবাকসের কর্ণধার

ডায়াপার বিক্রেতার ছেলে হাওয়ার্ড শুলজের শৈশবও ছিল সংগ্রামের। বাবার আঘাতপ্রাপ্তির পর বিমা বা আয়ের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না পরিবারে। নর্দার্ন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ চালাতে বারটেন্ডার হিসেবে কাজ করেছেন, এমনকি রক্তও বিক্রি করেছেন। ১৯৮৭ সালে ১২টি শাখাবিশিষ্ট স্টারবাকস কিনে নেন এবং সেটিকে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডে রূপ দেন। এখন তাঁর সম্পদমূল্য ৩৩০ কোটি ডলারেরও বেশি।

বব পারসনস: যুদ্ধের ময়দান থেকে ব্যবসায়িক সাফল্য

বাল্টিমোরের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া বব পারসনস স্কুলে প্রায় ফেল করেছিলেন। পরে ভিয়েতনাম যুদ্ধে যোগ দিয়ে চারটি মেডেল পান। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পর তিনি ‘গো ড্যাডি’ নামে একটি ওয়েব হোস্টিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে বিক্রি করে দেন। বর্তমানে গলফ ব্র্যান্ড পিএক্সজি ও আবাসন ব্যবসা নিয়ে কাজ করছেন। সম্পদমূল্য প্রায় ৪০০ কোটি ডলার।

ডেভিড মার্ডক: গ্যাস স্টেশনের ছাদ থেকে বহুজাতিক ব্যবসা

স্কুলছুট ডেভিড মার্ডক গ্যাস স্টেশনের ছাদে থেকে কাজ শুরু করেছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়ে ফিরে ১,৮০০ ডলার ধার করে খাবারের দোকান চালু করেন। পরে আবাসন ব্যবসায় বিনিয়োগ ও বিভিন্ন কোম্পানি কিনে প্রতিষ্ঠিত হন। বর্তমানে ৩৭০ কোটি ডলারের মালিক, ১০১ বছর বয়সেও ১২৫ বছর বাঁচার ইচ্ছা পোষণ করেন।

ক্রিস গার্ডনার: পাবলিক টয়লেট থেকে ওয়াল স্ট্রিট

মার্কিন স্টক ব্রোকার ক্রিস গার্ডনারের জীবন ছিল দুঃসহ। সন্তানকে নিয়ে রাত কাটিয়েছেন পাবলিক টয়লেটে, দিন কেটেছে গৃহহীন আশ্রয়কেন্দ্রে। কঠোর পরিশ্রমের পর স্টক ব্রোকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। ‘পারস্যুট অব হ্যাপিনেস’ সিনেমাটি তাঁর জীবনকাহিনি নিয়ে নির্মিত হয়েছে। সম্পদমূল্য ৭ কোটি ডলারের বেশি, যদিও শতকোটিপতি হতে পারেননি।

এই গল্পগুলো প্রমাণ করে, দারিদ্র্য ও প্রতিকূলতা অতিক্রম করার জন্য প্রয়োজন অদম্য ইচ্ছাশক্তি, অধ্যবসায় ও পরিশ্রম।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page