হল-মার্ক গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে গ্রুপটি ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নেয়, যা দেশজুড়ে তীব্র আলোড়ন তোলে। এই ঘটনায় ঋণগ্রহীতাকে জেলে যেতে হয় এবং ব্যাংকের পুনর্গঠন শুরু হয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে আমানতকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে ব্যাংকটি।
সোনালী ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে ব্যাংকটির আমানতের পরিমাণ ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা, যা বর্তমানে বেড়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছেছে। একই সময়ে ঋণ ৩৪ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা হয়েছে। ব্যাংকটির ৩৩ শতাংশ ঋণ এখন সরকারি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকৃত।
হল-মার্ক কেলেঙ্কারির পর ব্যাংকটি ঋণ নীতিতে পরিবর্তন আনে। বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণ থেকে সরে এসে সরকারি পণ্যে বিনিয়োগ এবং অন্যান্য ব্যাংকে অর্থ ধার দিয়ে সুদ আয়ের পথ বেছে নেয়। এর ফলে আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী হয়, গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি থেকে ২ কোটিতে পৌঁছায়।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় মেয়াদে একাধিক ব্যাংকে জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও, সোনালী ব্যাংক প্রভাবশালী মহলের চাপ এড়াতে সক্ষম হয়। ফলে ২০২৪ সালে ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফায় শীর্ষে অবস্থান করে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শওকত আলী খান জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণপ্রদানে ব্যাংকটি মনোযোগ দিচ্ছে এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। হল-মার্কের পাওনা সম্পদ বিক্রির পরিকল্পনাও রয়েছে, এবং ইতিমধ্যে ৬ কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
ব্যাংকটির ধারাবাহিক অগ্রগতি লক্ষণীয়। ২০১০ সালে ৯৮ কোটি টাকা লোকসান থেকে ২০১১ সালে ৯৯৬ কোটি টাকা মুনাফায় পৌঁছায়। ২০১২ সালে হল-মার্ক কেলেঙ্কারির ধাক্কায় ২,৪৯৬ কোটি টাকা লোকসানে পড়লেও ২০২২ সালে ২০৯ কোটি, ২০২৩ সালে ৪৭৬ কোটি এবং ২০২৪ সালে ১,৪৫২ কোটি টাকা সুদ আয় করতে সক্ষম হয়।
২০২২ ও ২০২৩ সালে ৬৫২ কোটি টাকা নিট মুনাফা করার পর ২০২৪ সালে ৫,৬৩৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে ব্যাংকটি, যা ব্যাংক খাতে সর্বোচ্চ। নিট মুনাফার চূড়ান্ত হিসাব এখনও সম্পন্ন হয়নি, তবে ধারাবাহিক অগ্রগতিতে ব্যাংকটির সাফল্য স্পষ্ট।