March 16, 2025, 10:56 am

কেমন হবে ইলন মাস্কের স্টারলিংক বাংলাদেশে এলে

মেহেদী হাসান
স্টারলিংক

বাংলাদেশে আসছে স্টারলিংক: ইন্টারনেট সেবায় নতুন যুগের সূচনা

দ্রুতগতির ইন্টারনেট–সেবা নিশ্চিত করতে সরকার বাংলাদেশে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা আনার উদ্যোগ নিয়েছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ বিষয়ে স্টারলিংকের প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন।

প্রশ্ন উঠছে—স্টারলিংক বাংলাদেশে এলে কী সুবিধা পাবে দেশের মানুষ?

ইন্টারনেট সেবার নতুন সম্ভাবনা

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্টারলিংক এলে বাংলাদেশের দুর্গম এলাকাগুলোতেও উচ্চগতির ইন্টারনেট–সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। ফলে শহর ও গ্রামের ডিজিটাল বিভাজন কমে আসবে। তরুণরা ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিংসহ বিভিন্ন ইন্টারনেটভিত্তিক কাজ করতে পারবেন।

দুর্যোগের পর যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও স্টারলিংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। স্যাটেলাইটভিত্তিক এই ইন্টারনেট সেবা গোপনীয়তা রক্ষা করতে সক্ষম। তবে, সেবাটি ব্যয়বহুল হওয়ায় সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য নাও হতে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন জানান, বিদ্যমান ইন্টারনেট সেবায় অনেক সময় গতি ও মান নিয়ে অভিযোগ থাকে। স্টারলিংক সেবা এলে মানসম্পন্ন ইন্টারনেটের একটি বিকল্প তৈরি হবে।

স্টারলিংক কী?

বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারনেট সেবা সাবমেরিন কেবল নির্ভরশীল। সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে তারের মাধ্যমে ব্যান্ডউইডথ দেশে আনা হয়। কিন্তু স্টারলিংক ইন্টারনেট সরাসরি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেবা দেয়, যা মাটির নিচে তারের প্রয়োজনীয়তা দূর করে।

স্পেসএক্সের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট থেকে আসে, যা ৩৫,৭৮৬ কিলোমিটার উপরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপন করা হাজারো স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা হয়। ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬,৯৯৪টি স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে।

কীভাবে কাজ করে স্টারলিংক?

স্টারলিংকের সেবা পেতে ব্যবহারকারীকে টেলিভিশন অ্যান্টেনার মতো একটি রিসিভার স্থাপন করতে হবে, যা স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। এই অ্যান্টেনার সঙ্গে একটি রাউটার যুক্ত করলেই ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে।

স্টারলিংকের ইন্টারনেট ডাউনলোড গতি ২৫ থেকে ২২০ এমবিপিএস পর্যন্ত হতে পারে, যেখানে বেশির ভাগ গ্রাহক ১০০ এমবিপিএসের ওপরে গতি পেয়ে থাকেন। আপলোড গতি সাধারণত ৫ থেকে ২০ এমবিপিএসের মধ্যে থাকে। তুলনামূলকভাবে, বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গড় গতি ৪০ এমবিপিএস এবং ব্রডব্যান্ডের ক্ষেত্রে ৫১ এমবিপিএস।

সেবার ব্যয়

স্টারলিংকের ওয়েবসাইট অনুসারে, ইন্টারনেট সেবা পেতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বা ‘স্টারলিংক কিট’ কিনতে হবে। এই কিটে থাকবে রিসিভার, কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, তার ও পাওয়ার সাপ্লাই।

  • কিটের দাম: ৩৪৯ থেকে ৫৯৯ ডলার (প্রায় ৪৩,০০০ থেকে ৭৪,০০০ টাকা)
  • মাসিক ফি: আবাসিক গ্রাহকের জন্য ১২০ ডলার (প্রায় ১৫,০০০ টাকা)

করপোরেট গ্রাহকদের জন্য খরচ আরও বেশি হবে।

স্টারলিংক বাংলাদেশে এলে ইন্টারনেট সেবায় নতুন মাত্রা যুক্ত হবে, বিশেষত গ্রামীণ ও দুর্গম অঞ্চলে। তবে ব্যয়বহুল হওয়ায় সাধারণ মানুষের জন্য এই সেবা কতটা সহজলভ্য হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর উদ্যোগই নির্ধারণ করবে, স্টারলিংক কত দ্রুত ও সহজে সাধারণ মানুষের নাগালে আসতে পারে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page