January 13, 2025, 4:01 am

মিল্টনের রিমান্ড চাওয়া হবে: ডিবি হারুন

Reporter Name

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অজস্র অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার নামে মামলা প্রক্রিয়াধীন। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড চাইবে পুলিশ।

বুধবার (১ মে) রাত ৯টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।

এসময় হারুন অর রশীদ বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মানবপাচার, নির্যাতনসহ প্রতারণার মামলা করা হবে। মিডিয়ায় যতো অভিযোগ এসেছে সব বিষয়েই তদন্ত করা হবে। এছাড়া রাতে কেনো লাশ দাফন করতেন এই বিষয়ে মিল্টন জানান, মানুষ তাকে প্রশ্ন করে তাই রাতে তিনি লাশ দাফন করতেন। এছাড়া মিল্টন সমাদ্দারের বক্তব্য অনুযায়ী ৯০০ দাফন করলেও ৮৩৫টি লাশের দাফনের কাগজপত্র দেখাতে পারেনি তিনি।

এর আগে, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ডিবি পুলিশের একটি দল রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। এছাড়া গত ২৫ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে মানবতার ফেরিওয়ালার মুখোশের আড়ালে ভয়ংকর সব প্রতারণার খবর প্রকাশ পায়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মিল্টন সমাদ্দার নামক এক ব্যক্তি ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের বৃদ্ধাশ্রম গড়ে রাস্তা থেকে অসুস্থ কিংবা ভবঘুরেদের কুড়িয়ে সেখানে আশ্রয় দেন। সেসব নারী, পুরুষ ও শিশুকে নিয়ে ভিডিও তৈরি করে প্রায়ই তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করতে দেখা যায়।

মানুষের অসহায়ত্ব তুলে ধরে তাদের জন্য বিত্তবানদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তার আবেদনে সাড়াও মেলে প্রচুর। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। মানবিক কাজের জন্য এখন পর্যন্ত তিনটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার।

এটি মিল্টনের আসল চেহারা নয়। প্রতিবেদনে ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। মানবিকতার আড়ালে তিনি যা করেন, তা গা শিউরে ওঠার মতো। যেই প্রতিষ্ঠানের জন্য এত পরিচিতি, সেই আশ্রম ঘিরেই ভয়াবহ প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন মিল্টন। প্রকৃতপক্ষে যে কয়জনকে লালন-পালন করছেন, তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি প্রচার করছেন। লাশ দাফন করার যে হিসেব দিচ্ছেন, তাতেও আছে অনেক গরমিল।

ফেসবুক পেজ ঘেঁটে দেখা যায়, মিল্টনের আশ্রমে সব সময় আড়াইশ থেকে তিনশ অসুস্থ রোগী থাকেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে রাস্তায় যারা মারা যান, তাদের দাফন করেন মিল্টন। আবার তার আশ্রমে অবস্থানকালেও অনেকে মারা যান। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০০ মরদেহ দাফন করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

মিল্টন জানান, যাদের দাফন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৬০০ জন তার আশ্রমে মারা গেছেন। আর বাকি ৩০০ মরদেহ রাস্তা থেকে এনে তিনি দাফন করেছেন। এসব মরদেহ রাজধানীর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান ও আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। সরেজমিন মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে গিয়ে জানা যায়, মিল্টন সমাদ্দারের প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে সেখানে সব মিলিয়ে ৫০টি মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়, এসব মরদেহের ডেথ সার্টিফিকেট গণমাধ্যমের কাছে রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিল্টন সমাদ্দারের দক্ষিণ পাইকপাড়া আশ্রমের কাছেই বায়তুর সালাম জামে মসজিদ। এই মসজিদে এক সময় তার প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা মরদেহ বিনামূল্যে গোসল করানো হতো। তার মানবিক কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে মসজিদ কর্তৃপক্ষ তাকে এই সুবিধা দিয়েছিল। তবে গোসল করানোর সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা প্রায় প্রতিটি মরদেহের বিভিন্ন স্থানে কাটাছেঁড়ার দাগ শনাক্ত করেন। এ বিষয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে মসজিদ কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করলে তিনি ওই মসজিদে মরদেহ পাঠানো বন্ধ করে দেন।

এছাড়া মানবসেবার অন্তরালে যে নির্মম ও বর্বরোচিত চিত্র ফুটে উঠেছে তা অত্যন্ত ভয়াবহ। মানবসেবা পরম ধর্ম কিন্তু মানব সেবার নামে মুখোশের আড়ালে রাস্তা থেকে অসুস্থ, অসহায় ও নিরীহ মানুষকে তুলে এনে চিকিৎসার নামে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির যে অভিযোগ মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে উঠেছে তা অত্যন্ত ভীতিকর, ন্যাক্কারজনক ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। গুরুতর অসুস্থদের হাসপাতালে না নিয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানে আটকে রাখা, ভুয়া ডাক্তার কর্তৃক মৃত্যু সার্টিফিকেট তৈরি করা কিংবা মৃত লাশের শরীরে কাটাছেঁড়ার তথ্য প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Our Like Page